সংকলন ১৪- মাইশার গল্প
স্টেশনের ওয়েটিং বেন্ঞ্চিতে বসে আছে মাইশা । তার বসার ভঙ্গিটি বিষণ্ন ।
সাড়ে এগারোটায় তার ট্রেন । সময় প্রায় হয়ে এল । কিন্তু তার ব্যস্ত চোখ এখনো এদিক ওদিক কাকে যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে । সে চোখে স্পষ্ট হতাশা, আশা ভঙ্গের যাতনা । মাইকে লাস্ট এনাউন্সিং টা শোনা গেল
। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল সে । ধীর পায়ে এগিয়ে গেল তার কামরার দিকে । তার হতাশা এখন ক্ষোভে রূপ নিয়েছে । 'হারামির এত্তবড় সাহস, আমাকে সি অফ করতে আসে না ! আর জীবনেও বদমাইশটার সাথে কথা বলব
না'- দাঁত কিড়মিড়িয়ে উঠে সে । ট্রেনের সিঁড়িতে পা রাখতেই চোখের কোণা দিয়ে কাকে যেন ছুটে আসতে দেখা গেল । সেদিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারল নীল আসতেছে । এতক্ষণে ঠোঁটের কোণায় মিষ্টি হাসি দেখা গেল । হাঁদারামটা অলওয়েজ লেট । আর একটু দেরি হলে তো দেখা হওয়াটাই মিস হয়ে যেত । নীল এসেই হাঁফাতে হাঁফাতে বলল- স্যরি স্যরি স্যরিরে... মাইশার কন্ঠে কপট রাগ-
তোরে না বলছি ঐ বাজে শব্দটা আমার সামনে আর উচ্চারণ করবি না ? এত দেরি করলি ক্যান ? আর একটু হলেতো দেখাই হত না । যা তোর সাথে আজ আর কথা নাই !
নীল কান ধরে ন্যাকু ন্যাকু স্বরে বলে- এত রাগ করিস ক্যান ? এই যে দেখ- কান ধরছি । আর কোনদিনও দেরি হবে না ।
নীলের মুখের দিকে তাকাতেই মাইশার সব রাগ কর্পূরের মত উবে গেল । ছেলেটার চেহারায় এত মায় কেন ? এই চেহারার দিকে তাকিয়ে কি রাগ করে থাকা যায় ?
:- হয়েছে হয়েছে । আর ঢং করতে হবে না । বাকিরা কই ?
:- বাকিরা আসবে না ।
:- ওহ । কিন্তু তুই এত
দেরি করলি কেন ?
:- একটু আটকে গিয়েছিলাম রে...
:- তা তো আটকাবিই ! তোর মাথায়
কি হয়েছে ?
:- আর বলিস না । ছোট খাটো একটা এক্সিডেন্ট ।
:- এক্সিডেন্ট !? কি হয়েছে ? কেমনে ? মাথা ফাটছে ? বেশী নাকি ?
:- উঁহু ! এত ব্যস্ত হইস না । সামান্যই....
:- সত্যি তো ?
:- হুম ।
:- তুই যা বেখেয়ালী ! এখনো যে মরছ
নাই এটাই ভাগ্য ।
:- কে বলল মরিনি ?
:- তুই মরেছিস ? তাহলে তো ভালই !
বন্ধুদের মাঝে দু একটা ভূত থাকা মন্দ
না !
:- একটা কথা বলি ?
:- বল...
:- তোকে না আজ খুব সুন্দর লাগছে !
:- তোর কাছে আমাকে কোনদিন সুন্দর
লাগেনা বলতো ?
মাইশা হেসে উঠল । নীলের চেহারায় লজ্জার আভা । আচ্ছা, ছেলেটা এত লাজুক
কেন ? প্রচন্ড একটা হুইসেল । তারপর ট্রেন চলতে শুরু করল । মাইশা গেইটে দাঁড়িয়ে, নীল প্লাটফর্ম ধরে ট্রেনের সাথে হাঁটছে ।
:- তোকে আরেকটা কথা বলি ?
:- হ্যাঁ বল না....
:- তোকে খুব ভালবাসি রে....
:- জানি তো !
:- না জানিস না তুই ।
মরিয়া হয়ে উঠল নীল ।
সে জানে মাইশাকে কিছু বলার এটাই তার শেষ সুযোগ । এই সুযোগ দ্বিতীয় বার কখনো আসবে না । তাই সবটুকু সাহস, সবটুকু শক্তি একত্রে করে বলে উঠল- তুই জানিস না । তুই জানিস আমি শুধুই তোর বন্ধু । কিন্তু তুই জানিস না- আমার সবটুকু জুড়েই আছিস শুধু তুই ।
:- নীল, তুই এসব কি বলছিস ?
:- যেটা শুনছিস সেটাই ।
তোকে আমি ভালবাসি । অনেক অনেক বেশী ভালবাসি । এ ভালবাসা বন্ধুর ভালবাসা নয় । তার চেয়েও
অনেকখানি বেশী কিছু । ট্রেনের গতি বাড়ছে । এখন আর হেঁটে এর সাথে ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব না । নীল দৌড়াচ্ছে, তার
দৃষ্টি মাইশার দিকে ।
সাড়ে এগারোটায় তার ট্রেন । সময় প্রায় হয়ে এল । কিন্তু তার ব্যস্ত চোখ এখনো এদিক ওদিক কাকে যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে । সে চোখে স্পষ্ট হতাশা, আশা ভঙ্গের যাতনা । মাইকে লাস্ট এনাউন্সিং টা শোনা গেল
। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল সে । ধীর পায়ে এগিয়ে গেল তার কামরার দিকে । তার হতাশা এখন ক্ষোভে রূপ নিয়েছে । 'হারামির এত্তবড় সাহস, আমাকে সি অফ করতে আসে না ! আর জীবনেও বদমাইশটার সাথে কথা বলব
না'- দাঁত কিড়মিড়িয়ে উঠে সে । ট্রেনের সিঁড়িতে পা রাখতেই চোখের কোণা দিয়ে কাকে যেন ছুটে আসতে দেখা গেল । সেদিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারল নীল আসতেছে । এতক্ষণে ঠোঁটের কোণায় মিষ্টি হাসি দেখা গেল । হাঁদারামটা অলওয়েজ লেট । আর একটু দেরি হলে তো দেখা হওয়াটাই মিস হয়ে যেত । নীল এসেই হাঁফাতে হাঁফাতে বলল- স্যরি স্যরি স্যরিরে... মাইশার কন্ঠে কপট রাগ-
তোরে না বলছি ঐ বাজে শব্দটা আমার সামনে আর উচ্চারণ করবি না ? এত দেরি করলি ক্যান ? আর একটু হলেতো দেখাই হত না । যা তোর সাথে আজ আর কথা নাই !
নীল কান ধরে ন্যাকু ন্যাকু স্বরে বলে- এত রাগ করিস ক্যান ? এই যে দেখ- কান ধরছি । আর কোনদিনও দেরি হবে না ।
নীলের মুখের দিকে তাকাতেই মাইশার সব রাগ কর্পূরের মত উবে গেল । ছেলেটার চেহারায় এত মায় কেন ? এই চেহারার দিকে তাকিয়ে কি রাগ করে থাকা যায় ?
:- হয়েছে হয়েছে । আর ঢং করতে হবে না । বাকিরা কই ?
:- বাকিরা আসবে না ।
:- ওহ । কিন্তু তুই এত
দেরি করলি কেন ?
:- একটু আটকে গিয়েছিলাম রে...
:- তা তো আটকাবিই ! তোর মাথায়
কি হয়েছে ?
:- আর বলিস না । ছোট খাটো একটা এক্সিডেন্ট ।
:- এক্সিডেন্ট !? কি হয়েছে ? কেমনে ? মাথা ফাটছে ? বেশী নাকি ?
:- উঁহু ! এত ব্যস্ত হইস না । সামান্যই....
:- সত্যি তো ?
:- হুম ।
:- তুই যা বেখেয়ালী ! এখনো যে মরছ
নাই এটাই ভাগ্য ।
:- কে বলল মরিনি ?
:- তুই মরেছিস ? তাহলে তো ভালই !
বন্ধুদের মাঝে দু একটা ভূত থাকা মন্দ
না !
:- একটা কথা বলি ?
:- বল...
:- তোকে না আজ খুব সুন্দর লাগছে !
:- তোর কাছে আমাকে কোনদিন সুন্দর
লাগেনা বলতো ?
মাইশা হেসে উঠল । নীলের চেহারায় লজ্জার আভা । আচ্ছা, ছেলেটা এত লাজুক
কেন ? প্রচন্ড একটা হুইসেল । তারপর ট্রেন চলতে শুরু করল । মাইশা গেইটে দাঁড়িয়ে, নীল প্লাটফর্ম ধরে ট্রেনের সাথে হাঁটছে ।
:- তোকে আরেকটা কথা বলি ?
:- হ্যাঁ বল না....
:- তোকে খুব ভালবাসি রে....
:- জানি তো !
:- না জানিস না তুই ।
মরিয়া হয়ে উঠল নীল ।
সে জানে মাইশাকে কিছু বলার এটাই তার শেষ সুযোগ । এই সুযোগ দ্বিতীয় বার কখনো আসবে না । তাই সবটুকু সাহস, সবটুকু শক্তি একত্রে করে বলে উঠল- তুই জানিস না । তুই জানিস আমি শুধুই তোর বন্ধু । কিন্তু তুই জানিস না- আমার সবটুকু জুড়েই আছিস শুধু তুই ।
:- নীল, তুই এসব কি বলছিস ?
:- যেটা শুনছিস সেটাই ।
তোকে আমি ভালবাসি । অনেক অনেক বেশী ভালবাসি । এ ভালবাসা বন্ধুর ভালবাসা নয় । তার চেয়েও
অনেকখানি বেশী কিছু । ট্রেনের গতি বাড়ছে । এখন আর হেঁটে এর সাথে ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব না । নীল দৌড়াচ্ছে, তার
দৃষ্টি মাইশার দিকে ।
:- তুই জানিস নীল, আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । দুদিন পরেই আমার বিয়ে । আমি গ্রামে ফিরছিই বিয়ে করার জন্য । তুই এটা জানিস । দুইদিন পর তোরা সবাই সেখানে আসছিসও । আর তুই কিনা আজ আমাকে এসব বলছিস ?
:- হয়ত আর কখনো বলার সুযোগ
:- না, এখন আমি কিছু শুনবো না । ভালই
যদি বাসতি, তাহলে আগে বলতি ? এখন কেন বলছিস ? এখন আমি কিছু শুনবো না । তুই চলে যা নীল.... তুই
চলে যা এখান থেকে.... নীল থমকে দাঁড়িয়েছে । মাইশা দ্রুতগতিতে দূরে সরে যাচ্ছে । ভালবাসার মানুষটির
এভাবে চলে যেতে দেখা অনেক কষ্টের... অনেক অনেক কষ্টের
একটি দৃশ্য । নীলকে চলে যেতে বলেই মাইশা ভিতরে চলে এল । প্রচন্ড
কান্না আসছে তার । চেপে রাখার কোন চেষ্টাই সে করল না । ডুঁকরে কেঁদে উঠল ।
কেন কাঁদছে সে ? প্রিয় বন্ধুটিকে ফিরিয়ে দেয়ার কষ্টে ? নাকি পরম আরাধ্য ভালবাসাকে হাতের নাগালে পেয়েও ধরতে না পারার যন্ত্রনায় ? সে জানে না । সে কিছুই জানে না.....
(লুতুপুতুর পাঠকরা এখানেই ক্ষ্যামা দেন ! বাকি অংশটা তাদের জন্য না । আর কিউরিয়াস পাঠকরা- যারা বাকিটা পড়তে চান, নিজ দায়িত্বে পড়বেন । পড়েই চুপ মেরে যাবেন । কোন ব্যাখ্যা চাইবেন না !)
জানালার পাশেই মাইশার সিট । অঝোর ধারায় কাঁদছে সে । এমন সময় তার ফোন
বেজে উঠল । বান্ধবী তিশা করেছে । নিজেকে কোনমতে সামলে ফোন ধরল ।
:- হ্যাঁ বল....
:- কোথায় তুই ?
:- এই তো... ট্রেনে ।
:- ট্রেন কি ছেড়ে দিয়েছে ?
:- এইমাত্র ছাড়ল ।
তোরা আমাকে সি অফ
করতে আসলি না কেন ?
:- তোর কি আজকে যেতেই হবে ? আজ
না গেলে হয় না ?
:- কেন ? কি হয়েছে ?
:- খুব বেশী দরকার না হলে সামনের
স্টেশনে নেমে যা ।
:- আরে আজিব !
কি হয়েছে সেটা তো বলবি !
:- নীল আর নেই ।
:- নেই মানে ? কোথায় গেছে ?
:- মাইশা, নিজেকে একটু শক্ত কর....
নীল মারা গেছে ।
:- ফাইজলামি করছ ? একটু আগেই তো.....
জানালা দিয়ে পিছনে তাকাল মাইশা ।
সেখানে কেউ নেই । থাকার কথাও ছিল
না ।
:- একটু আগে কি ?
:- একটু আগেই তো ওর সাথে দেখা হল ।
আমাকে সি অফ করতে এসেছিল ।
:- মাথা খারাপ তোর ? সাড়ে দশটায় ওর এক্সিডেন্ট হয়েছিল । সাথে সাথেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু লাভ হয় নি । ব্রেনে প্রচুর ড্যামেজ হয় । রিকভার করা যায় নি ।
:- কি বলছিস তুই ? আমি....
:- দেখ মাইশা, তোর হয়ত কোথাও ভুল হচ্ছে । আমরা সবাই না তোকে সি অফ
করতে যাওয়ার কথা ছিল ? ওকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম বলেই তো যাওয়া হয়নি । এক্সিডেন্টের পর
থেকেই ওর সাথে আছি । একটু আগে ডাক্তার তাকে অফিসিয়াল ডেড
ঘোষণা করে । তোকে অনেকবার ফোন দিতে চেয়েছিলাম । কিন্তু তোর ফোন আনরিচেবল ছিল । ও তো তোর বেস্ট
ফ্রেন্ড ছিল । ওকে শেষ দেখাটা দেখার জন্য কি তুই থাকবি না ? প্লিজ, তুই চলে আয় না.... তিশা আরো অনেক কথাই বলে চলেছে । কিন্তু সেসবের কিছুই মাইশার কানে ঢুকেছে না । বন্ধু বিয়োগের ব্যথা তাকে এখনো স্পর্শ করছে না ।
সে বুঝতে পারছে না আসলে তার সাথে কি হচ্ছে ? নিজেকে কেমন যেন অনুভূতি শূন্য মনে হচ্ছে ।
[[পনের বছর পর]]
:- স্কুল থেকে ফিরে আন্টিকে একটুও
জ্বালাবে না, ঠিকাছে আব্বু ?
:- ঠিকাছে আম্মু ।
:- দুপুরে ঠিকমত খেয়ে নিবে,
বিকেলে জুস
খেয়ে বাইরে খেলতে যাবে, ভিডিও
গেমস নিয়ে একদম বসবা না ।
মনে থাকবে তো ?
:- বললাম তো থাকবে । একই
কথা প্রতিদিন বলো কেন ?
আমি তো এখন আর বাচ্চা নাই !
:- ওরে আমার পিচ্চিরে.....
তিনি তো এখন বড় হয়ে গেছেন !
দেখি তো কত বড় হয়েছেন ?
:- ধরবা না আম্মু... ধরবা না...
ধরবা না....
মাইশা হৃদয়কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরতে যা । কিন্তু হৃদয় হাত গলিয়ে বেরিয়ে যায়
। যা দুষ্টু হয়েছে পিচ্চিটা ! সেদিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হাসে মাইশা । তারপর ব্যাগ নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায় ।
মাইশা একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর । অনেক বড় পোস্ট, দায়িত্বও অনেক । সময় মত বাসায় আসা হয় না তার । এজন্য বাচ্চাকে নিয়ে টেনশনের শেষ নেই । জন্য একজন গভর্নেস আছে । কিন্তু
তারপরও সে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে না । মায়ের মন তো ! পুরো কাহিনী না জানা থাকলে বাইরে বুঝতে পারবে না যে হৃদয় তার গর্ভের ছেলে না । তাকে সে একটি অরপানেজ থেকে দত্তক নিয়েছিল । সত্য
ঘটনা হচ্ছে- মাইশা কখনো বিয়েই করেনি । সেদিন সামনের স্টেশনে নেমে গিয়েছিল সে । ছুটে গিয়েছিল হাসপাতালের মর্গে, যেখানে তার প্রিয় বন্ধুটি শান্তিতে ঘুমাচ্ছে । লাশেল পাশে বসে ছিল কিছুক্ষণ । তারপর তার
কি হল কে জানে ? সিদ্ধান্ত নিল সে আর বিয়ে করবে না । বাবা-মা অনেক চেষ্টা করেও তাকে আর বিয়েতে রাজি করাতে পারে নি । সে বিয়ে করেনি এটা সবাই জানে । কিন্তু কেন করেনি এটা কেউই জানে না । সব কথা কি সবার জানতে হয় ?
কিছু রহস্য না হয় অমিমাংসীতই থেকে যাক.....
(( The End ))
অফটপিকঃ বিখ্যাত ব্লগার নাজিম-উদ- দৌলা ভাইয়ের একটা গল্প পড়েছিলাম ।
সেখানে- নায়ক মারা যাওয়ার পরওফিরে এসে তার বউকে বিপদ
থেকে উদ্ধার করে বাসায় পৌঁছে দেয় !
আমার গল্প না হয় নায়ক মারা যাওয়ার পর এসে তার প্রেমিকাকে প্রপোজ করে গেল ! ক্ষতি কি ? প্রথমেই বলেছি, গল্পের কোন
ব্যাখ্যা চাইবেন না । পৃথিবীতে সব ঘটনার ব্যাখ্যা থাকতে হয় না । তবে আসল কথা হল- এই গল্পের কোন
ব্যাখ্যা আমার কাছেও নেই ।
:- হয়ত আর কখনো বলার সুযোগ
:- না, এখন আমি কিছু শুনবো না । ভালই
যদি বাসতি, তাহলে আগে বলতি ? এখন কেন বলছিস ? এখন আমি কিছু শুনবো না । তুই চলে যা নীল.... তুই
চলে যা এখান থেকে.... নীল থমকে দাঁড়িয়েছে । মাইশা দ্রুতগতিতে দূরে সরে যাচ্ছে । ভালবাসার মানুষটির
এভাবে চলে যেতে দেখা অনেক কষ্টের... অনেক অনেক কষ্টের
একটি দৃশ্য । নীলকে চলে যেতে বলেই মাইশা ভিতরে চলে এল । প্রচন্ড
কান্না আসছে তার । চেপে রাখার কোন চেষ্টাই সে করল না । ডুঁকরে কেঁদে উঠল ।
কেন কাঁদছে সে ? প্রিয় বন্ধুটিকে ফিরিয়ে দেয়ার কষ্টে ? নাকি পরম আরাধ্য ভালবাসাকে হাতের নাগালে পেয়েও ধরতে না পারার যন্ত্রনায় ? সে জানে না । সে কিছুই জানে না.....
(লুতুপুতুর পাঠকরা এখানেই ক্ষ্যামা দেন ! বাকি অংশটা তাদের জন্য না । আর কিউরিয়াস পাঠকরা- যারা বাকিটা পড়তে চান, নিজ দায়িত্বে পড়বেন । পড়েই চুপ মেরে যাবেন । কোন ব্যাখ্যা চাইবেন না !)
জানালার পাশেই মাইশার সিট । অঝোর ধারায় কাঁদছে সে । এমন সময় তার ফোন
বেজে উঠল । বান্ধবী তিশা করেছে । নিজেকে কোনমতে সামলে ফোন ধরল ।
:- হ্যাঁ বল....
:- কোথায় তুই ?
:- এই তো... ট্রেনে ।
:- ট্রেন কি ছেড়ে দিয়েছে ?
:- এইমাত্র ছাড়ল ।
তোরা আমাকে সি অফ
করতে আসলি না কেন ?
:- তোর কি আজকে যেতেই হবে ? আজ
না গেলে হয় না ?
:- কেন ? কি হয়েছে ?
:- খুব বেশী দরকার না হলে সামনের
স্টেশনে নেমে যা ।
:- আরে আজিব !
কি হয়েছে সেটা তো বলবি !
:- নীল আর নেই ।
:- নেই মানে ? কোথায় গেছে ?
:- মাইশা, নিজেকে একটু শক্ত কর....
নীল মারা গেছে ।
:- ফাইজলামি করছ ? একটু আগেই তো.....
জানালা দিয়ে পিছনে তাকাল মাইশা ।
সেখানে কেউ নেই । থাকার কথাও ছিল
না ।
:- একটু আগে কি ?
:- একটু আগেই তো ওর সাথে দেখা হল ।
আমাকে সি অফ করতে এসেছিল ।
:- মাথা খারাপ তোর ? সাড়ে দশটায় ওর এক্সিডেন্ট হয়েছিল । সাথে সাথেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু লাভ হয় নি । ব্রেনে প্রচুর ড্যামেজ হয় । রিকভার করা যায় নি ।
:- কি বলছিস তুই ? আমি....
:- দেখ মাইশা, তোর হয়ত কোথাও ভুল হচ্ছে । আমরা সবাই না তোকে সি অফ
করতে যাওয়ার কথা ছিল ? ওকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম বলেই তো যাওয়া হয়নি । এক্সিডেন্টের পর
থেকেই ওর সাথে আছি । একটু আগে ডাক্তার তাকে অফিসিয়াল ডেড
ঘোষণা করে । তোকে অনেকবার ফোন দিতে চেয়েছিলাম । কিন্তু তোর ফোন আনরিচেবল ছিল । ও তো তোর বেস্ট
ফ্রেন্ড ছিল । ওকে শেষ দেখাটা দেখার জন্য কি তুই থাকবি না ? প্লিজ, তুই চলে আয় না.... তিশা আরো অনেক কথাই বলে চলেছে । কিন্তু সেসবের কিছুই মাইশার কানে ঢুকেছে না । বন্ধু বিয়োগের ব্যথা তাকে এখনো স্পর্শ করছে না ।
সে বুঝতে পারছে না আসলে তার সাথে কি হচ্ছে ? নিজেকে কেমন যেন অনুভূতি শূন্য মনে হচ্ছে ।
[[পনের বছর পর]]
:- স্কুল থেকে ফিরে আন্টিকে একটুও
জ্বালাবে না, ঠিকাছে আব্বু ?
:- ঠিকাছে আম্মু ।
:- দুপুরে ঠিকমত খেয়ে নিবে,
বিকেলে জুস
খেয়ে বাইরে খেলতে যাবে, ভিডিও
গেমস নিয়ে একদম বসবা না ।
মনে থাকবে তো ?
:- বললাম তো থাকবে । একই
কথা প্রতিদিন বলো কেন ?
আমি তো এখন আর বাচ্চা নাই !
:- ওরে আমার পিচ্চিরে.....
তিনি তো এখন বড় হয়ে গেছেন !
দেখি তো কত বড় হয়েছেন ?
:- ধরবা না আম্মু... ধরবা না...
ধরবা না....
মাইশা হৃদয়কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরতে যা । কিন্তু হৃদয় হাত গলিয়ে বেরিয়ে যায়
। যা দুষ্টু হয়েছে পিচ্চিটা ! সেদিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হাসে মাইশা । তারপর ব্যাগ নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায় ।
মাইশা একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর । অনেক বড় পোস্ট, দায়িত্বও অনেক । সময় মত বাসায় আসা হয় না তার । এজন্য বাচ্চাকে নিয়ে টেনশনের শেষ নেই । জন্য একজন গভর্নেস আছে । কিন্তু
তারপরও সে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে না । মায়ের মন তো ! পুরো কাহিনী না জানা থাকলে বাইরে বুঝতে পারবে না যে হৃদয় তার গর্ভের ছেলে না । তাকে সে একটি অরপানেজ থেকে দত্তক নিয়েছিল । সত্য
ঘটনা হচ্ছে- মাইশা কখনো বিয়েই করেনি । সেদিন সামনের স্টেশনে নেমে গিয়েছিল সে । ছুটে গিয়েছিল হাসপাতালের মর্গে, যেখানে তার প্রিয় বন্ধুটি শান্তিতে ঘুমাচ্ছে । লাশেল পাশে বসে ছিল কিছুক্ষণ । তারপর তার
কি হল কে জানে ? সিদ্ধান্ত নিল সে আর বিয়ে করবে না । বাবা-মা অনেক চেষ্টা করেও তাকে আর বিয়েতে রাজি করাতে পারে নি । সে বিয়ে করেনি এটা সবাই জানে । কিন্তু কেন করেনি এটা কেউই জানে না । সব কথা কি সবার জানতে হয় ?
কিছু রহস্য না হয় অমিমাংসীতই থেকে যাক.....
(( The End ))
অফটপিকঃ বিখ্যাত ব্লগার নাজিম-উদ- দৌলা ভাইয়ের একটা গল্প পড়েছিলাম ।
সেখানে- নায়ক মারা যাওয়ার পরওফিরে এসে তার বউকে বিপদ
থেকে উদ্ধার করে বাসায় পৌঁছে দেয় !
আমার গল্প না হয় নায়ক মারা যাওয়ার পর এসে তার প্রেমিকাকে প্রপোজ করে গেল ! ক্ষতি কি ? প্রথমেই বলেছি, গল্পের কোন
ব্যাখ্যা চাইবেন না । পৃথিবীতে সব ঘটনার ব্যাখ্যা থাকতে হয় না । তবে আসল কথা হল- এই গল্পের কোন
ব্যাখ্যা আমার কাছেও নেই ।
Comments
Post a Comment